উলুবাতলি হাসান | Ulubatli Hasan (An Ottoman Jannissary)
বুরসার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাসান। গ্রামটির নাম ছিল উলুবাত। তাই তার নাম রাখা হয় উলুবাতলি হাসান বা উলুবাতের হাসান।
উলুবাতলি হাসান |
১৪৫৩ সালে এপ্রিল মাসে যখন সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ ২য় কন্সটান্টিনোপল বিজয় এর উদ্দেশ্য সামরিক যাত্রা শুরু করেন তখন উলুবাতলি হাসান তার অজেয় জেনিসারী বাহিনীর ২৫ বছরের এক যোদ্ধা ছিলেন।
লাগাতার ৫৩ দিন ভয়াবহ কামান দাগানোর পরেও সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ ২য় খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না কন্সটান্টিনোপল এর দেয়ালের বিপক্ষে। কেননা কন্সটান্টিনোপল পরপর ৩টি দেয়াল দ্বারা পূর্ণরূপে সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু এত ভারী গোলা বর্ষণের কারনে দেয়ালে বেশ ভালই ফাটল ধরেছিল।
১৪৫৩ সালের ২৯ মে ভোরবেলা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ ২য় তার শেষ এবং সবথেকে ভয়ানক আক্রমণ শুরু করেন। অটোমান জেনিসারীরা একসাথে কন্সটান্টিনোপলের ভিতর ঢুকতে শুরু করে।
কিন্তু বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সটান্টিন ১১ এর নগর সুরক্ষায় নিয়োজিত ছিল সেসময়ের যুদ্ধপটু জলদস্যু জেনোইজ জিওভান্নি যাস্টিনিয়ান্নি লংগো। তার শক্ত অবস্থান এর কারনে হাজার হাজার জেনিসারী মারা যেতে থাকে। অটোমানদের মনোবল ক্ষুন্ন হতে শুরু করে।
ঠিক তখনই উলুবাতলি হাসান অটোমান সাম্রাজ্যের রাজকীয় পতাকা হাতে কন্সটান্টিনোপলের দেয়ালের মাথায় উঠার জন্য আগ্রাসী ভাবে সামনে আগাতে শুরু করেন। তাকে দেখাদেখি আরও ৩০ জন সৈন্য তার পিছে ছুটে যায়।
চারিদিকে ঝকঝকে তরবারি আর শানিত তীরের ছোটাছুটি। সেসব উপেক্ষা করেই উলুবাতলি হাসান দেয়ালের উপরে উঠতে শুরু করেন। তাকে অটোমান পতাকা হাতে দেয়ালে উঠতে দেখে বাইজেন্টাইন সৈন্যরা তাকে নিশানা করে তীর ছুড়তে থাকে। তার সহচর ১৭ জন জেনিসারী তীরের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। কিন্তু তিনি উঠতে থাকেন বিরতি বিহীন।
হঠাৎ একটি তীর তার গায়ে এসে বিধে। কষ্ট উপেক্ষা করে তিনি মইবেয়ে অগ্রসর হতে থাকেন। কিন্ত সাথে সাথে আরও অনেকগুলো তীর তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্ধ হয়। তিনি পড়ে যেতে যেতেও নিজেকে সামলে নিয়ে উঠতে থাকেন। অবশেষে তিনি কন্সটান্টিনোপলের দেয়ালের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হন। তিনি সেখান থেকে বাইজেন্টাইনদের ক্রুশের পতাকা সরিয়ে অটোমানদের চাঁদ-তারা ক্ষচিত উসমানীয় লাল পতাকা উড্ডীন করেন। ততক্ষণে অনেক তীর তার শরীর ঝাঝরা করে দিয়েছে। তার বাকি সহচর এসে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু উলুবাতলি হাসান অটোমান সাম্রাজ্যের রাজকীয় পতাকা হাতে তীর বিদ্ধ হয়ে ঠায় সেখানে দাড়িয়ে থেকে তার শরীরের ভর দিয়ে উসমানীয় পতাকাকে পতন থেকে রক্ষা করতে করতে শাহাদাত বরণ করেন। পরে দেখা যায় তার শরীরে প্রায় ২৭ থেকে ৩০টি তীর বিদ্ধ ছিল।
অটোমান পতাকা উড়তে দেখে বাইজেন্টাইনদের মনোবল ভেঙে পড়ে আর অন্যদিকে অটোমানদের সাহস আর আগ্রাসন বৃদ্ধি লাভ করে। সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ ২য় জেনিসারীদের নিয়ে তীব্রতার সাথে কন্সটান্টিনোপল জয় করে নেন।
কন্সটান্টিনোপোল জয় |
উলুবাতলি হাসান, যিনি ৩০টি তীর বিদ্ধ হয়েও অটোমানদের জন্য পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন যেন তারা সাহসের সাথে আল্লাহর জন্য এই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয় আর কাফির বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মনোবল শেষ হয়ে যায়। ইসলামের ইতিহাসে তিনি একজন অসামান্য বীর হিসাবে পরিচিত লাভ করেন যা ইসলামের সাথে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
No comments