থাইরয়েড আপনার গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটা প্রজাপতি আকারের গ্রন্থি, যেখান থেকে উৎপন্ন হয় থাইরয়েড হরমোন | অতি সক্রিয় গন্থি থেকে প্রচুর থাইরয়েড হরমোন টি৩ টি৪ ক্ষরন হয় । থাইরয়েড গ্রন্থি দুটি কারনে অতিসক্রয় হতে পারে একটা প্রাইমারি কারন আর একটা সেকেন্ডারি কারন।
গ্রেভস ডিজিজ, টক্সিক মাল্টিনডিউলার গয়টার, থাইরয়েডাইটিস, টক্সিক এডিনোমা এসব থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, এই রোগগুলো থাইরয়েড গ্রন্থিকে অতি সক্রিয় করে ফেলে, বেশি বেশি আয়োডিন গ্রন্থিতে ঢুকে এবং বেশি বেশি টি৩ টি৪ তৈরি হয়, বেশি টি৩ টি৪ তৈরি হওয়ায় টি এস এইচ এর উপর নেগেটিভ উদ্দীপনা দেয়, যে নিজের গুলো নিয়ে বাচি না আপনি আবার চাপ দিয়েন না। তখন টি এস এইচ কমে যায়। এটাকে বলে প্রাইমারি থাইরোটক্সিকোসিস
**T3 T4 --- TSH**
থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপনা দেয় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন ( টি এস এস) ।পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার হলে প্রচুর টি এস এস ক্ষরন হয়। এই টি এস এইচ থাইরয়েড গ্রন্থিকে সক্রিয় করে এর থেকে বেশি বেশি টি৩ টি৪ ক্ষরন করায়। এটাকে বলে সেকেন্ডারি বা গৌণ থাইরোটক্সিকোসিস যেহেতু থাইরয়েড গ্রন্থির নিজস্ব কোন সমস্যার কারনে টি৩ টি৪ বাড়ে নাই,বাড়সে পিটুইটারির সমস্যায়।
*TSH ------T3 T4 *
হাইপারথাইরয়েডিজম এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
অতিসক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরী করে, এই অবস্থাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। অতিসক্রিয় থাইরয়েডের উপসর্গগুলো নিচে দেওয়া হল:
থাইরয়েড হরমোনের কাজ এর সাথে লক্ষণ গুলো মিলিয়ে পড়ব। যেহেতু বেশি বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরি হচ্ছে তাই কাজ গুলো ও বেশি হবে।
কাজ- বিপাকীয় কার্যাবলী বাড়িয়ে দেয় এর কারনে যা দেখা দিবে- ১. লক্ষণ -প্রচুর তাপ নির্গত হবে শরীরে যার ফলে তার আর গরম সহ্য হবে না,ঠান্ডায় থাকতে চাবে।ঘামতে থাকবে, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বায়ুমন্ডলে বের করে দিবে। চিহ্ন -হাতের তালু উষ্ণ থাকবে ও লাল লাল দাগ দেখা যাবে।-পালমার এরিথমা।( উত্তপ্ত রক্তের প্রবাহটিকে ত্বকে সরিয়ে দেয়,ত্বকীয় রক্ত বাহিকা প্রশারনের মাধ্যমে , যেখানে তাপটি আরও সহজে বায়ুমণ্ডলে মুক্তি পেতে পারে) ২. লক্ষন-যা খাবে তাই বিপাক হয়ে যাবে, অতিরিক্ত শর্করা শোষন,প্রোটিন ভাঙন,চর্বি ভাঙ্ন হবে তাড়াতাড়ি, ওজন কমে যাবে, তাই বেশি বেশি খাবে, শরীরে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। চিহ্ন-জরাজীর্ণ শরীর
বিটা এড্রেনারজিক এক্টিভিটি বাড়িয়ে দিবে, অর্থাৎ সিমপ্যাথেটিক কার্যকরিতা বাড়িয়ে দিবে যেখানে যেখানে সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সাপ্লাই দেয়। ১. হার্ট- লক্ষন- বুক ধড়ফড় করবে। চিহ্ন হার্ট রেট বেড়ে যাবে,সাইনাস ট্যাকিকারডিয়া। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হয়ে যেতে পারে, সেখান থেকে হার্ট ফেইলর ও ডেভলপ করতে পারে। পালস - ইররেগুলার রক্ত চাপ- সিস্টোলিক হাইপারটেনশন হবে, উপরের টা বেড়ে যাবে, হাই কার্ডিয়াক আউটপুট এর কারোনে
২. ফুসফুস- লক্ষন-শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে|অতিরিক্ত বিপাক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য বেশি বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন,তাই শ্বাস প্রশাসের ড্রাইভ টা বেশি থাকে। চিহ্ন -বেজাল ক্রেপস পেতে পারি( বাম হার্ট ফেইলর এর সাইন) ৩. অন্ত্রের চলাচল বাড়িয়ে দিবে - লক্ষন- পাতলা পায়খানা দিনে ৩-৪ বার প্রায়ই ৪. পেশিতে -প্রোটিন কে ভাঙ্গবে লক্ষন - ক্লান্তিকর চিহ্ন -হাত কাঁপা-কাঁপি - ট্রেমর ৫. ঘাম গ্রন্থি-সিমপ্যাথেটিক সাপ্লাই লক্ষন- প্রচুর ঘামবে চিহ্ন -হাতের তালু ঘর্মাক্ত ৬. চোখে- চিহ্ন -চোখের পাতা সংকুচিত হয়ে সাদা অংশ বাহ্যিক দৃশ্যমান করে দেয়। লিড রিট্রাকশন, লিড লেগ
এগুলো সব হল বিটা এড্রেনারজিক এক্টিভিটি বেড়ে যাওয়ার কারনে হয়।
এছাড়া কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এক্টিভ করা
মস্তিষ্ক - লক্ষন-বিরক্তিভাব,মনোযোগ কম,স্মৃতি শক্তি দূর্বল হয়ে যায়।রেটিকুলার সিস্টেম ও ব্যাজাল গ্যাংলিয়া বেশি আক্রান্ত হয়।
হাড় ক্ষয়রোগ
অন্যান্য লক্ষন যেমন মাসিক কমে যায় ঘুম কমে যায় চুল পরে যেতে পারে চুলকানি থাকতে পারে
শুধুমাত্র গ্রেভস ডিজিজ এ পাওয়া যায় নিন্মোক্ত লক্ষণগুলো- চোখ বের হয় আসে হাঁটুর নীচে পায়ের তালুতে লাল লাল গোটা গোটা দাগ থাকতে পারে
সারসংক্ষেপ হাইপারথইরয়েডিজম এ সব বাড়বে শুধু মাত্র ৪ টা জিনিস কমবে- ১.ওজন কমবে ২.মসিক কম হবে ৩.ঘুম কম হবে ৪.ক্লোস্টেরল কমবে - যকৃতে LDL গ্রহীতা বড়িয়ে দেয় যার ফলে অতিরিক্ত ক্লোস্টেরল গ্রহীতার সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হয়ে যায়।
হাইপারথাইরয়েডিজম কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যে কোনো প্রকার থাইরয়েডের সমস্যা নিম্নলিখিত উপায়ে নির্ণয় করা হয়:
গলার শারীরিক পরীক্ষা। বিস্তৃত গলা ফোলা বা গলগণ্ড, নরম, ব্যাথাবিহীন, নড়ানো যায়, ঢোক গিলার সাথে নড়ে না। স্টেথোতে ব্রুইট শব্দ শোনা যায়(উচ্চ রক্ত প্রবাহ থাকার কারনে)- গ্রেভস ডিজিজ বিস্তৃত ব্যাথযুক্ত গলগণ্ড - সাব একুইট থাইরয়েডাইটিস অনেকগুলো দলাযুক্ত গলগণ্ড - ঢোক গিলার সাথে নড়ে, শ্বাসনালী কে চেপে এক দিকে ঠেলে দেয় - মাল্টি নডিউলার গয়টার এক জায়গায় একটা দলা- এডিনোমা,সিস্ট, কারসিনোমা
নির্দিষ্ট পরীক্ষা ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে- ১.রক্তপরীক্ষা: থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) টি3, এবং টি4 এর মাত্রা জানার জন্য।
T3 T4 --------- TSH -প্রাইমারি থাইরোটক্সিকোসিস TSH-------T3 T4-- সেকেন্ডারি থাইরোটক্সিকোসিস ২. আয়োডিন গ্রহণের পরীক্ষা।- হাইপারএক্টিভ বেশি বেশি আয়োডিন গ্রহন করবে,বেশি বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরি করবে ৩.থাইরয়েড স্কানিং ৪.সিনটিগ্রাফি গলগন্ড অন্য কারন থেকে আলাদা করতে ৫.গ্রন্থিতে নডিউলসের আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং। ৬.গ্রন্থিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বায়োপসি।
অনির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা, সব বাড়বে শুধু ক্লোস্টেরল কমবে ১.সিরাম এনজাইম - ALT,GGT,ALP 2.বিলিরুবিন - ৩.গ্লাকোসুরিয়া - অতিরিক্ত শর্করা শোষণ করবে ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে, রক্তে গ্লুকোজ বাড়বে, অতিরিক্ত গ্লুকোজ কিডনি দিয়ে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেড় হয়ে যাবে। ৪.ক্লোস্টেরল কমবে -যকৃতে LDL গ্রহীতা বাড়ার কারনে অতিরিক্ত ক্লোস্টেরল গ্রহীতার সাথে যুক্ত হয়ে ব্যাবহার হয়ে যাবে। এছাড়া একটা ECG করতে হবে -ST,AF দেখার জন্য
রক্ত পরীক্ষায় সনাক্ত হওয়া গ্রন্থি এবং হরমোন স্তরের দ্বারা প্রদর্শিত কার্যকলাপ অনুসারে থাইরয়েড সমস্যাগুলির চিকিৎসা ভিন্ন হবে।
নিম্নলিখিত উপায়ে হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করা হয়:
ওষুধ: রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন, অ্যান্টি-থাইরয়েডের ওষুধ, এবং অ্যান্টি-প্রদাহের ওষুধ। বিটা ব্লকার খেলে স্মিপ্যাথেটিক লক্ষন গুলো কমবে। সার্জারি-সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর কিছু অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়। নিয়মিত চেক-আপ এবং ফলো-আপ, হাইপারথাইরয়েডিজমের যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে। ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য আপনাকে থাইরয়েডের সমস্যাগুলি দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারে
No comments