আস্তাবল থেকে দিল্লির মসনদ!!
মোঘল সম্রাট বাবর যখন হিন্দুস্তানে তার নতুন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন, তখন বিহারে এক মোঘল আস্তাবলের চাকরের ছেলে ফারিদ খাঁন মোঘল সেনাবাহিনীতে যোগদান করে এবং ধীরে ধীরে তিনি বিহারের সুবাদার হিসাবে পদন্নোতি পান। ১৫৩৭ সালে যখন মোঘল সম্রাট হুমায়ুন অন্যান্য ঝামেলা নিয়ে ব্যাস্ত, তখন তিনি বিদ্রোহ করেন এবং বিহারে সূর সাম্রাজ্য স্থাপন করে নিজেকে বাংলা এর সাম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন।
হুমায়ুন (বামে) ও শের শাহ সুরি (ডানে) |
তিনি তার রাজকীয় নাম নেন, শের শাহ্ সূরী। তিনিই প্রথম অর্থ হিসাবে রুপির প্রচলন করেন এবং বিহারে বসে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। বিহার থেকে শুরু করে উড়িষা এবং বাংলা তার সূর সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। আর মোঘল সম্রাটের তখন এই কাদামাটির দেশে আক্রমণ করার উপায় ছিল না কেননা মোঘল সাম্রাজ্য তখনও শক্তপোক্ত নয়।
মোঘল সম্রাট হুমায়ুন মির্জা অল্প বয়েসেই আগ্রার সিংহাসনে বসেন। তিনি খুবই খেয়ালী মেজাজের ছিলেন। সারারাত তিনি লাইব্রেরিতে কাটাতেন। জোর্তিরবিদ্যা নিয়ে তার খুব আগ্রহ ছিল। সাম্রাজ্য চালনায় তেমন মন ছিল না তার। শের শাহ্ সূরী বিদ্রোহ করে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করায় তাকে চাকরের ছেলে বলে বিদ্রুপ করে সম্রাট হুমায়ুন। ফলে মোঘলদের অবস্থান যখন অনেক নড়বড়ে। এই সুযোগে ১৫৪০ সালে যখন সম্রাট হুমায়ুন অন্য কোথাও অভিযানে যান, তখন শের শাহ্ সূরী আগ্রা আক্রমণ করেন এবং সিংহাসন দখল করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সম্রাট হুমায়ুনকে তাড়িয়ে হিন্দুস্তানের সীমানার বাইরে বের করে দেন। সম্রাট হুমায়ুন কিছু মোঘল রাজকীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে পারস্যে পালিয়ে যান।
কিন্তু মোঘল সম্রাজ্ঞী হামিদা বানু তখন অন্তসত্তা এবং আকবর তার গর্ভে। এ অবস্থায় তিনি পালাতে অক্ষম। তিনি প্রচন্ডরকম ভয়ে ছিলেন যে তার কি হবে কেননা, এমন অবস্থায় শত্রুর বংশকে শেষ করে দেওয়াই প্রথা যেন সিংহাসনের কোন দাবিদার না থাকে। যখন শের শাহ্ সূরী আগ্রা দূর্গে আসেন তখন তিনি হামিদা বানুকে বলেন, "আপনি কোন ভয় পাবেন না। আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুপুত্রের কোন ক্ষতি হবে না। আপনি একজন রাজবংশের সম্মানিত রমনী হিসেবেই এই দূর্গে অবস্থান করুন। আপনাকে আমি মা ডাকলাম, মা, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।"
হামিদা বানু তখন শের শাহ্ সূরীর এই কথা আর ব্যাবহার দেখে অবাক হয়ে যান। শের শাহ্ সূরী তার শত্রুর স্ত্রী এবং পরবর্তী মোঘল উত্তরসূরীকে হত্যা না করে তাকে মা বলে ডাকায় তিনি অভিভূত হন। তিনি হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন শের শাহ্ তার জীবনে আর কোন যুদ্ধে পরাজিত না হোন। এবং তিনি তাকে বলেন, "তুমি আর কোন যুদ্ধে কখন পরাজিত হবে না, ইন শা আল্লাহ। যদি সেই যুদ্ধ আমার স্বামীর বিরুদ্ধে হয় তবুও তুমিই জয়লাভ করবে।"
পরে শের শাহ্ সূরী পাঁচ বছর হিন্দুস্তানের সম্রাট ছিলেন। তার শাসন ব্যবস্থা ছিল অনন্য। তিনি হিন্দুস্তানকে শক্তিশালী সাম্রাজ্যে রুপান্তর করেন। এক দিন সকালে তার গোলন্দাজ বাহিনীর মহড়া তিনি পরিদর্শন করতে যান। এবং হঠাৎ তার পাশের একটা কামান বিস্ফোড়িত হয় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার পুত্র ইসলাম শাহ ক্ষমতায় আসে এবং সম্রাট হুমায়ুন আবার আক্রমণ করে হিন্দুস্তানে মোঘল শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন।
মোঘল সম্রাজ্ঞী হামিদা বানু আল্লাহর কাছে দোয়া করার পর শের শাহ্ সূরী কোন যুদ্ধে পরাজিত হোননি। অপমৃত্যুতে তার প্রাণ যায়। আল্লাহ হয়তো অন্তসত্তা হামিদা বানুর দোয়া কবুল করেছিলেন।
No comments