ইহসান
মুসলিম ইতিহাসে 'আমিরুল মুমেনীন' খ্যাত ব্যাক্তি যিনি এক সময় ৩ টি মহাদেশ একাধারে শাসন করেছেন। তার আগে ছিলেন সুলেমান, ওয়ালিদ , সাইদ বিন আব্দুল মালিক।
আমিরুল মুমেনীন যখন গভর্নর ছিলেন ৬০ টা উটের প্রয়োজন হতো শুধু মাত্র তার আসবাব পত্র বহন করার কাজে। যখন তিনি আমিরুল মুমেনীন হলেন তিনি তার সকল অধীনস্তদের একটি ভাষণ দেন যাতে তিনি বলেন " হে দুনিয়া বাসি, আমার পূর্বসূরীরা দুনিয়া কে আপন করে নিয়েছিল, অর্থ - ক্ষমতা কে আপন করে নিয়েছিল। আমি আল্লাহ কে আপন করে নিচ্ছি।"
তার শাসন আমলে ৩ মহাদেশে যাকাত নেওয়ার মতো লোক ছিলনা, কোনো স্বৈরাচারী ছিলনা, ৩ টা মহাদেশে কোনো মজলুম ব্যাক্তি ছিলনা।
তার স্ত্রীর মত পারিবারিক মর্যাদা সম্পন্ন নারী আজও পৃথিবীতে আসেননি যার নাম ছিল ফাতিমা। বাবা ছিলেন মারওয়ান বাদশাহ; সুলেমান, ওয়ালীদ, আব্দুল মালিক ৩ ভাই বাদশাহ, নিজের স্বামী ওমর বিন আব্দুল আজিজ বাদশাহ!
আমিরুল মুমেনীন হওয়ার পর তিনি তার স্ত্রী কে একটা কথাই বলতেন, "ফাতিমা, আমি জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারবোনা।" ঈদের সময় ছেলে মেয়ের নতুন জামা কিনে দেওয়ার জন্য স্ত্রী অনুরোধ করেন। তিনি জানান তার কাছে টাকা নেই। স্ত্রী তাকে পরামর্শ দেন প্রয়োজনে আপনি পরবর্তী মাসের বেতন অগ্রিম নিয়ে তাদের কে জামা এনে দিন, যতটুকু ঘাটতি হবে উনি শ্রম দিয়ে উপার্জন করে নিবেন।
আমিরুল মুমেনীন তার অর্থ মন্ত্রীর শরণাপন্ন হন, মুজাহিদ।
তিনি অনুরোধ করেন মুজাহিদ কে যে "ভাই ছেলে মেয়েকে নতুন জামা কিনে দেবো, দয়া করে আমার পরের মাসের বেতন টা অগ্রিম দিয়ে দাও।" মুজাহিদ জানান, "আমিরুল মুমেনীন আপনি আমাকে লিখিত দিন যে আপনি আরো একমাস জীবিত থাকবেন, আমি আপনাকে বেতন দিয়ে দিচ্ছি।" আমিরুল মুমেনীন ফেরত আসেন। স্ত্রী কে জানিয়ে দেন, ছেলে মেয়েদের বলো এই ঈদ এ তাদের কিছু দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
বাদশাহ সুলেমান এর লাশ কবর এ নেওয়ার আগেই শরীর ছট্ফট্ করে ওঠে। সবাই ভাবে জীবিত আছেন। কিন্তু তা না। কবরে যাওয়ার পূর্বেই তার আযাব শুরু হয়। ওয়্যালিদ এবং সাইদ বিন মালিকের কাফনের কাপড় সরাতেই দেখা যায় তাদের মুখ কালো হয়ে গিয়েছে এবং কিবলা থেকে মুখ সরে গিয়েছে। বস্তুত, ইনারা কেউই বেনামাজী ছিলেন না। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত সবই আদায় করতেন। সাইদ বিন আব্দুল মালিক তাহাজ্জুদের নামাজে ১০ পারা কোরআন তেলওয়াত করতেন। কিন্তু ইনারা যালিম ছিলেন। আমানতের খিয়ানত কারি ছিলেন, মানুষকে অত্যাচার, অনাচার করতেন। মৃত্যুর সময় আল্লাহ তাদের সকল ইবাদত তাদের মুখেই ছুড়ে দেন। কারণ তারা যালিম ছিলেন।
আমিরুল মুমেনীন ওমর বিন আব্দুল আজিজ যখন মারা যান একটি ঝড়ো বাতাস বয়ে যায় চারিদিকে। বাতাসে তার কাফনের ওপর একটা সাদা কাগজ এসে পড়ে। যেখানে লেখা থাকে " বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটা ওমর বিন আব্দুল আজিজের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির পরওয়ানা। তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত"
সারকথা : পৃথিবীতে সব চেয়ে শক্তিশালী ইবাদত হলো ইহসান (দ্বীনের তৃতীয় মাত্রা, বাকি দুটি হলো আল ইসলাম ১ম এবং আল ঈমান ২য়), যার অর্থ হলো সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা। অন্যায়, অবিচার, অর্থ, ক্ষমতা, লোভ কোনো কিছুই আপনাকে পরিত্রাণ দিবেনা। ইহসান এর অনুপস্থিতি মুছে দিতে পারে আপনার সকল নেক ইবাদত।
১৮.০৭.২০
No comments